১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটা স্মরণিকা বের করেছিলাম। স্কুলের ৫/৬ জন মিলে। আমরা তখন ক্লাস এইটে। রফিক, রিয়াজ, লিটু, গাজী আর আমি। হুমায়ূন ও ছিল নাকি, মনে পড়ছে না। চাঁদা তুলে টাকা জোগাড় করেছিলাম। এ-৪ সাইজের কাগজে ১৬ বা ২৪ পৃষ্ঠার ছিল মনে হয়, পরিষ্কার মনে নেই। মানিক মিয়া এভেন্যুে রিক্সা সাইকেল দাঁড় করিয়ে চাঁদা তুলতাম। মানুষ চাইলেই টাকা দিয়ে দিত। মানিক মিয়া তখন আট/দশ লেনের ছিল। লেনগুলোর মাঝে ভীষণ বড় বড় গাছ নিয়ে চওড়া আইল্যান্ড ছিল। রিক্সার জন্য আলাদা লেন ছিল, ২টা রিক্সা অনায়াসে এক দিকের লেন দিয়ে যেতে পারতো। এখান থেকে এক হাজার বা বারশ টাকা তুলেছিলাম। বাকি পাঁচ বা সাত শত টাকা কারুর কাছ থেকে ডোনেশান নিয়েছিলাম। কার কাছ থেকে মনে নেই। রফিকের দুলাভাই হয়তো বা অন্য কেউ। সারাটাদিন মানিক মিয়ায় থাকতাম, দুপুরে রুটি ভাজি খেতাম। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত আমাদের কালেকশান চলত। কেউ কোন বাধা দেয় নাই তবে একদিন এক পুলিশ অফিসার আমদের কাছ থেকে কেন ও কি করছি জিজ্ঞাসা করে জেনে নিয়েছিল। তবে নিষেধ করে নাই।
ছাপানোর খরচের জন্য প্রেসকে ১৮০০টাকা দিব বলে সাব্যস্ত হয়েছিল। কিন্তু সব শেষে তিনশত টাকা আর দেই নাই। এই না দেয়াটা কি আপোষে হয়েছিল নাকি আমরা পালিয়ে গিয়েছিলাম তা এখন মনে নাই। প্রেসের মালিকের নাম শেখ জাতীয় কিছু ছিল। বাম রাজনীতি করার মানুষ। আমরা বুঝতাম যে উনি আমাদেরকে পছন্দ করেন।
স্মরণিকার নামটা কিছুটা অস্বাভাবিক, নামটি হোক উদয়ের পথে। আমরা যখন নাম খুজছিলাম তখন প্রেসের মালিক এই নামটা বলেন। কি আশ্চর্য, নামটা শোনার সাথেসাথেই আমাদের পছন্দ হয়ে যায়। আমরা তখন কত ছোট!