…… যে মুজিব ৩ মার্চের মিটিংয়ে (যেখানে তিনি স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন) ছাত্রনেতাদের দ্বারা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের দৃশ্য দেখেছিলেন এবং সেদিন থেকে সেই পতাকা ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট ও গভর্নর হাউস ছাড়া সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালতে শোভা পাচ্ছিল, সে পতাকা, ‘তিনিই জনসভায় উত্তোলনের ব্যাপারটি নাকচ করে দিলেন। উত্তেজনা ধীরে ধীরে কুণ্ডলী পাঁকিয়ে জমা হচ্ছিল। তিনি মঞ্চে আরোহণ করলেন। একটি ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ বিশাল জনসমুদ্রের দিকে তাকালেন। (বঙ্গবন্ধু শেখ) মুজিব তাঁর স্বভাবসুলভ বজ্রকণ্ঠে শুরু করলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে কন্ঠস্বর নিচুতে নামিয়ে আনলেন বক্তব্যের বিষয়বস্তুর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য। তিনি একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন না। কিন্তু ২৫ মার্চে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের বিষয়ে চারটি শর্তারোপ করলেন। এগুলো হলো: (এক) মার্শাল ল’ তুলে নিতে হবে। (দুই) জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। (তিন) সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে। (চার) বাঙালি হত্যার কারণ খুঁজে বের করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
বক্তৃতার শেষ দিকে তিনি জনতাকে শান্ত এবং অহিংস থাকার উপদেশ দিলেন। যে জনতা সাগরের ঢেউয়ের প্রচণ্ড আবেগ নিয়ে রেসকোর্সে ভেঙে পড়েছিল- ভাটার টানধরা জোয়ারের মতো তারা ঘরে ফিরে চলল…
(বাঙালির জাতীয় রাষ্ট্র, কাজী আরিফ আহমেদ, পৃষ্ঠা ১৫৬)