নির্বাচন পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ ও পশ্চিম পাকিস্তানে পিপলস পার্টি জয়ী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান। তাদের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনের ফলাফলকে কীভাবে গ্রহণ করেছে তা জানা যায়।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৭ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে অসাধারণ সাফল্যের জন্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও পিপলস পার্টিট প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টোকে অভিনন্দন জানান। দুই নেতার নিকট প্রেরিত একই ধরনের দুইটি অভিনন্দন বাণীতে প্রেসিডেন্ট বলেন, আপনার দলের অসাধারণ সাফল্যের জন্য আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই।
নির্বাচনী ফলাফলে প্রকাশিত হয় যে, পাকিস্তানের জনগণের অতি বৃহৎ অংশ জাতীয় জীবনের এই ক্রান্তিলগ্নে আপনাদের দলের উপর আস্থা স্থাপন করেছে। আমাদের মাতৃভূমির ঐক্য ও সংহতি রক্ষা এবং জনগণের রাজনৈতিক আকাংখা পূরণ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমৃদ্ধি বিধানে সক্ষম একটি শাসনতন্ত্রের আশায় দেশবাসী এখন সাগ্রহে অপেক্ষা করিবে। আমি আশা ও প্রার্থনা করি, আপনাদের নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের ওপর আরোপিত শাসনতন্ত্র প্রণয়নের গুরু দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করতে সমর্থ হবেন। পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বিজয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দন জানান। তিনি এক বিবৃতিতে জানান যে, গত ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আমাদের ইতিহাসের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে যেসব প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন, আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। বিজয়ী প্রার্থীরা এখন তাদের রায়ের মাধ্যমেই বিনম্র আর মহানুভবতা প্রদর্শন করবেন বলেই আমার বিশ্বাস। তিনি আরো বলেন, এ প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের জনগণ প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ ভোটে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অবাধ সুযোগ পেয়েছে। উত্তেজনা ছিল অত্যন্ত প্রবল কিন্তু জাতি যে সুশৃঙ্খলার পরিচয় দিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় আর তাই তা সর্বমহলে প্রশংসাও লাভ করেছে। এতে জাতির রাজনৈতিক সচেতনতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মূল পরিকল্পনা সামরিক সরকারের রয়েছে। নির্বাচন হচ্ছে তার প্রথম পর্যায় মাত্র। দ্বিতীয় পর্যায় হচ্ছে একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন। এ জন্যই নবনির্বাচিত প্রার্থীদের আমি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, জনগণ তাদের ভোট দিয়ে তাদের ওপর বিরাট আস্থা স্থাপন করেছে। দেওয়া নেওয়া ও সহনশীলতার ভিত্তিতে এখনই তারা শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কাজে লেগে যান। জাতি এখন তাদের কাছে এই চাচ্ছে। জাতি তাদের ওপর যে আস্থা স্থাপন করেছে তারা তা রক্ষা করবেন এ বিশ্বাস আমার আছে। তাদের প্রচেষ্টা সফল হোক এটাই আমার কামনা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুস সাত্তার বলেন, সার্বজনীন ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর পাকিস্তান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক লোক ভোটদানের ফলে ইহা প্রতিপন্ন হয়েছে যে, দেশের ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র নির্ধারণ এবং যে রাজনৈতিক অবস্থার অধীনে শাসিত হবে সে সম্পর্কে নিজেদের মনোভাব জ্ঞাপনের জন্য জনসাধারণ উদগ্রীব। তিনি তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, জনসাধারণ যে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন এবং কোনো শক্তিই যে তাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে নিবৃত্ত করতে পারবে না তা প্রমাণিত হয়েছে। তাদের রাজনৈতিক পরিপক্কতা লক্ষ্য করে বৈদেশিক পর্যবেক্ষকরাও বিস্মিত হয়েছেন। নির্বাচনের ফলাফল দৃষ্টে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, জনসাধারণ অবস্থার পরিবর্তন সাধনের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত। এই নির্বাচনে এটিই প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা আঞ্চলিকতা ও ব্যক্তিত্বের ভিত্তিতে ভোট প্রয়োগ করেনি। তারা নীতির ভিত্তিতে ভোট প্রয়োগ করেছে।
পাকিস্তান পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর টেলিফোনে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনা করেন এবং পূর্ব পাকিস্তানে একচেটিয়া জয় লাভের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে অভিনন্দন জানান। পাকিস্তান পিপলস পার্টির করাচী জোনের চেয়ারম্যান আবদুল হাফেজ পীরজাদা বলেন, গণপরিষদে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ নির্ধারিত ১২০ দিনের শাসনতন্ত্র রচনার পথ সহজ করে তুলেছে। পাকিস্তান পিপলস পার্টির করাচী শাখার সভাপতি আবদুল হাফিজ পীরজাদা বলেছেন যে, গণপরিষদের পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির প্রার্থীরা বিপুলভাবে নির্বাচিত হওয়ার নির্দিষ্ট ১২০ দিনের মধ্যে শাসনতন্ত্র রচনার সম্ভাবনা উজ্জল হয়ে উঠেছে। তাঁর মতে পিপলস পার্টির প্রার্থীরা জয়লাভ করায় শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা সহজতর হয়েছে। তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টির বিজয়কে জনগণের বিজয় বলে উল্লেখ করেছেন। জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেন যে, আমাদের জনগণ এক ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছে। তারা এক অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের এ রায় প্রদানের অধিকার অর্জন করেছে। আমাদের লক্ষ্য ৬-দফা এবং তা বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। তিনি দেশবাসীকে এ আশ্বাস দেন যে, ৬-দফা ভিত্তিক পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা সম্বলিত শাসনতন্ত্র প্রণীত হবে এবং ছয়দফাকে সামগ্রিকভাবে বাস্তবায়িত করা হবে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে বিজয়ী হওয়ায় পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান ভুট্টোকে অভিনন্দন জানান। তারযোগে প্রেরিত এক ফিরতি অভিনন্দন বার্তায় শেখ মুজিব তাঁর নিকট অভিনন্দন বাণী প্রেরণ করার জন্য ভুট্টোকে ধন্যবাদ জানান। জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের মতো প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ধন্যবাদ জানান। জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের মতো প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান আরেকবার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের পরিচয় দান করায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এই বিজয় আসলে বাংলাদেশের শোষিত জনগণের বিজয়।
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে নিজ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন পাকিস্তান ন্যাশনাল লীগের প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান খান, কৃষক শ্রমিক পার্টির সভাপতি এ এস এম সোলায়মান, পাকিস্তান ইসলামিক প্রজাতন্ত্র দলের সভাপতি মওলানা নুরুজ্জামান, কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ দৌলতানা, প্রাদেশিক মুসলিম লীগ প্রধান খাজা খয়েরউদ্দিন, মীর সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক যান, কাউন্সিল মুসলিম লীগের নেতা এয়ার মার্শাল (অব.) নূর খান, পাকিস্তান কনভেনশন মুসলিম লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী। তারা তাদের প্রতিক্রিয়ায় দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ ও পশ্চিম পাকিস্তানে পিপলস পার্টির চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোকে অভিনন্দন জানান। তারা সকলে দেশের ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র থেকে শুরু করে সকল ধরনের কর্মকাণ্ডে উভয় দলকে সহযোগিতা করার কথা ব্যক্ত করেন।
কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা যায় পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামির আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম এর বিবৃতিতে। তাঁর মতে, নির্বাচনে পাকিস্তানের রাজনীতি যুক্তির চেয়ে ভাবাবেগ দ্বারাই বেশি পরিচালিত হয়েছে। এমনকি আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও কর্তৃপক্ষ বিগত এক বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে স্বাধীন ভাবে কাজ করার যথাযথ নিশ্চয়তা দানে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর দলের অকুন্ঠ বিশ্বাস রয়েছে। গণতন্ত্রই দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তনের একমাত্র মাধ্যম বলে তিনি দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেন। এই বিবৃতি প্রদানের একদিন পর গোলাম আযম শেখ মুজিবকে অভিনন্দন জানিয়ে পূর্ণ সহযোগিতা দান ও গঠনমূলক বিরোধিতার আশ্বাস দেন। কিন্তু ঢাকায় গোলাম আযমের সভাপতিত্বে প্রাদেশিক জামায়াতে ইসলামির দুইদিন ব্যাপী কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নির্বাচনী ফলাফলকে মেনে নিতে অস্বীকার করা হয়। এই সভায় বলা হয়, নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি। কিন্তু ১২ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের কার্যকরী পরিষদের জরুরী সভায় দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রাতাব গৃহিত হয়। জামায়াতে ইসলামির নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ওমরাও খান জাতীয় পরিষদে নির্বাচনে অনিয়মানুবর্তিতা ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে দুর্নীতির অভিযোগ বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। ভোট গ্রহণকারী কর্মচারীদের আচরণ ছিল সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং প্রশংসাযোগ্য।
ন্যাপ ভাসানী পন্থীরা যদিও নির্বাচনে অংশ নেয়নি তবু ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এক সাংবাদিক সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তান ন্যাপের সাথে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সম্পর্কচ্ছেদের কথা ঘোষণা করেন। তিনি আওয়ামী লীগের এ ঐতিহাসিক বিজয়কে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার প্রশ্নে জনসাধারণের গণভোটের রায় বলে মন্তব্য করেন। নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে ওয়ালী ন্যাপের সভাপতি যান আবদুল ওয়ালী খান বলেন যে, পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে, যে দু’টি রাজনৈতিক দল প্রধানত বিজয়ীর বেশে আবির্ভূত হয়েছে, সে দুটি দল হলো আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টি। দুটিই মূলত আঞ্চলিক দল। কারণ পশ্চিম পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের বুনিয়াদ নেই, পূর্ব পাকিস্তানে পিপলস পার্টির অস্তিত্বই নেই। এই ঘটনা দুই রাজনৈতিক দলের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক স্বরূপ। এক অর্থে এর গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ দেশ রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপ ওয়ালী পন্থী সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলতাফ হোসেন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন পূর্ববাংলার জনগণ গণতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ সংগ্রাম করে আসছে। তা বাস্তবায়নে দৃঢ় সংকল্পই ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান নূরুল আমীন জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের পর তাঁর এক প্রতিক্রিয়ায় গণতন্ত্রের আস্থাশীল হিসেবে জনগণের রায়কে সম্মান করার কথা বলেন। নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান অভিযোগ করেন, আবেগ উত্তেজনার পরিবেশে দেশে এ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) সরফরাজ খান জাতীয় পরিষদে নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের জন্য শেখ মুজিব ও ভুট্টোকে অভিনন্দন জানান। অবিভক্ত বাংলার প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম সাধারণ নির্বাচনে বিরাট সাফল্য লাভের জন্য শেখ মুজিব ও ভুট্টোকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ইসলাম কখনো বিপদাপন্ন হয়নি বা হবেও না। যারা নিজেদের ইসলাম পছন্দের দাবীদার বলে ঘোষণা করেছেন এবং ইসলামের অভিভাবক সেজে বসেছেন তারাই বিপদাপন্ন হয়েছেন। নির্বাচনে পাকিস্তানের জনসাধারণ যে উচ্চমানের রাজনৈতিক সচেতনতার পরিচয় দিয়েছে তার জন্য অভিনন্দন জানান। খিলাফতে রব্বানী পার্টির চেয়ারম্যান এ এম এম মোফাখখার সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাফল্য অর্জনের জন্য শেখ মুজিবের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
নির্বাচনের ফলাফলের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে অ্যান্থনী ম্যাসকারেনহাস উল্লেখ করেছেন- নির্বাচনের ফলাফল বিভিন্ন লোকের কাছে বিভিন্ন তাৎপর্য বহন করেছিল। আওয়ামী লীগের পতাকাতলে বাঙালীরা ছিল বিজয়োল্লাসে উল্লসিত। এই প্রথমবারের মতো তারা প্রকৃত ক্ষমতার আশায় উজ্জীবিত হয়েছিল। এর সঙ্গে অতীতের উপনিবেশিক শাসনপদ্ধতির অবসান ঘটানোর এবং দুই দশকের শোষণের প্রতিকার করার যোগ্যতা তারা অর্জন করেছিল। ভুট্টো কেবল পাঞ্জাবে এবং করাচীতে অপ্রত্যাশিত বিজয় লাভ করেও বিস্তৃত রাজনৈতিক ক্ষেত্র সম্পর্কে তার উল্লাসকে দমন করতে পারেননি। জামাতে ইসলামির মতো ধর্মভিত্তিক দলগুলো তাদের পরাজয়কে সহজভাবে স্বীকার করে নিতে পারেনি। সর্বোপরি জামাত প্রকাশ্যভাবে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছে। জনগণ যেভাবে তাদের রায় দিয়েছে, সেকথা ভেবে সমগ্র দেশ চরম বিস্ময়বোধ করেছে। ….. নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে সরকার ছিল নিরপেক্ষ এবং সরকার নিজেকে কেবল পরিবর্তনশীল কর্তৃপক্ষ হিসেবে দাবী করেছিল যা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজে এবং যত শীঘ্র সম্ভব নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপার ছিল উৎসর্গীকৃত। (বাংলাদেশ লাঞ্ছিতা, পৃ. ৭২-৭৩)।
সূত্র
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যদয় – মোশারফ হোসেন।