৭০ বা ৭১ এর উত্তাল সময়ে ডক্টর কামাল হোসেন আওয়ামীলীগ ও শেখ মুজিবরের সাথে খুবই ঘনিষ্ট হয়ে রাজনৈতিক কাজ করেছেন। ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে ডক্টর কামাল যা লিখেছেন এটা নিচে দেখি। পরে বাকি আর কে কি দেখেছেন বা বুঝেছেন সব বিবেচনা করে নিজের ভাবনা ঠিক করতে পারবো।
৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল মাত্র ১৯ মিনিটের। এর কার্যকর ঘোষণাটি ছিল: ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সুনির্দিষ্টভাবে তোলা হলো জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সামরিক আইন বাতিলের দাবি। (ভাষণের পর প্রেস বিজ্ঞপ্তির জন্য) যখন লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করা হলো, তখন তাজউদ্দীন আহমদ তা সংশোধন করে এই দুটি দাবি আরও নির্দিষ্টভাবে সন্নিবেশ করেছিলেন। স্পষ্টত স্বাধীনতাই ছিল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সত্যিকার অর্থে এটি ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। কিন্তু ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে এবং স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ামাত্র তারা যাতে আক্রমণ পরিচালনা করতে পারে, সে জন্য তারা নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে।
তখন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার ব্যাপারটি সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে গেলেন।
এখানে উল্লেখ করা দরকার যে ৬ মার্চ রাতে একজন ব্রিগেডিয়ার বঙ্গবন্ধুর দপ্তরে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ইয়াহিয়ার কাছ থেকে বার্তা এনেছিলেন যে ইয়াহিয়া শিগগিরই ঢাকায় আসার এবং বাঙালিদের সন্তুষ্ট করা যাবে, এমন একটি সমঝোতায় পৌছানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
সেটা ছিল একটা কৌতূহলোদ্দীপক বার্তা। প্রতীয়মান হলো, রেডিও ঘোষণার মাধ্যমে যে আঘাত ইয়াহিয়া হেনেছিলেন, তাকে একটু লঘু করা এবং একই সঙ্গে ৭ মার্চ অনুষ্ঠেয় জনসভায় বঙ্গবন্ধু যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তাকে একটু নরম করার চেষ্টা করা। ইয়াহিয়ার নিজের জন্যও সেটা একটা অজুহাত খাড়া করার চেষ্টা ছিল। কারণ, যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়, তাহলে ইয়াহিয়া যাতে বিশ্বদরবারে বলতে পারেন যে তিনি একটি শান্তিপূর্ণ সমঝোতার জন্য ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন: কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই সুযোগ না দিয়ে একতরফা স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন এবং এভাবে তাঁর শক্তি প্রয়োগকে অনিবার্য করে তুলেছিল। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, সেটাও ছিল এর অন্যতম কারণ।
কামাল হোসেনঃ বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও ন্যায়ের সন্ধানে
প্রথম প্রথমা বাংলা সংস্করণ
পৃষ্ঠা ১২৪