আটচল্লিশ সালে ঢাকায় জিন্না সাহেবের সেই উর্দু চাপানো বক্তৃতার অনেক আগের এ ঘটনা মামুনের মনে পড়ে । এটা বোধহয় এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেকেই জানে না। সেবারে বহরমপুরে মুশলিম কাউনসিলের প্রাদেশিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করতে এসেছিলেন জিন্না। গ্রাম বাংলা থেকে হাজার হাজার মুসলমান এসেছে কায়েদ-ই-আজম জিন্না সাহেবকে দেখল জন্য । পোশাক-পরিচ্ছদ ও আদব-কায়দায় খাঁটি সাহেব তিনি, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, কঠোর ভাবলেশ মুখ। সভাপতি হিসেবে তিনি সভার অনুষ্ঠানসূচী হাতে তুলে নিলেন। প্রথমেই রয়েছে উদ্বোধনী সঙ্গীত, গাইবেন আব্বাসউদ্দীন। জিন্না নির্দেশ দিলেন, নো মিউজিক !
বিস্ময়ের ঘোর কাটাবার জন্য কয়েক মুহূর্ত সবাই স্তব্ধ হয়ে ছিল। তারপরেই শুরু হলো হট্টগোল। আব্বাসউদ্দীনের গান হবে না। এ আবার কী রকম কথা ? তা হলে সভা চলতে দেওয়া হবে না। জিন্না বুঝতেই পারেননি যে আব্বাসউদ্দীন নামে কে একটা লোক বাংলার মানুষের কাছে এতখানি জনপ্রিয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি রাজি হলেন । সভা শুরু হবার আগে আব্বাসউদ্দীন শোনালেন পর পর তিনখানা গান।
বাংলার মুশলিম লীগের দুই প্রধান নেতা নাজিমউদ্দীন এবং সোহরাওয়ার্দী অবশ্য ভাল করে বাংলায় কথাই বলতে পারেন না। সাহেবসুবো এবং অবাঙালী ব্যবসায়ী শ্রেণীদের সঙ্গে তাঁদের দহরম মহরম । সাহেবরাই তখন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুশলিম লীগকে খেলাচ্ছে। বাংলায় মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেখে পাঞ্জাব ও সিন্ধু থেকে বড় বড় মুসলমান ব্যবসায়ী এসে ঘাঁটি গাড়ছে কলকাতায়, তাদের ব্যবসা ছড়িয়ে দিচ্ছে বাংলা দেশে। জিন্না সাহেব কলকাতায় এলে ইস্পাহানি, আদমজী, হাজি দাউদ প্রমুখ অবাঙালী মুশলিম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ওঠা বসা করতেন । শক্তিশালী অবাঙালী মুসলমান গোষ্ঠী কর্তৃক বঙ্গবিজয়ের পরিকল্পনা তখন থেকেই আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে। (পূর্ব পশ্চিম, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)।