jaaan,
তুই আজ ধরা, ছোঁয়া, রাগ, অভিমান, ভালোবাসা সকল কিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেছিস। আমি যতই তোকে ডাকি, তুই আর কোনদিন বলবি না, ” hae jaan bolo”
আমি আর কখনো তোর গলা শুনব না। জীবন কত নিষ্ঠুর শিক্ষা দিয়ে দিলো আমাদের বল। আমার পোস্ট, স্টোরির একজন ও ভিউয়ার হলে সেটা তুই ছিলি। আজকে আমার এই লেখা ও তোকে আর স্পর্শ করবে না।
আমি অনেক কপাল করে তোকে পাইছি, আল্লাহ যেন এমন কপাল কাউকে না দেয়।
২০ জুন ২০২১,
তুই প্রথম আমাকে বললি তোর আমাকে ভালো লাগে। আমি টিপ পরি তাই তুই একটা ফেসবুক পোস্ট করলি টিপ নিয়ে। আমি ভাবলাম আতরা ফাতরা ছেলে তুই, খালি খালি ফ্লার্ট করতেছিস, তারওপর পড়াশোনায় ডাব্বা। এরকম ছেলের সাথে কথা বলতে আম্মু নিষেধ করে দিছে।
এরপর ইনবক্সে অনেক ফ্লার্ট চলল তোর…….
অক্টোবর ২০২১
করোনার পরে আমাদের টার্ম ফাইনাল শুরু। সেবার ফিজিক্স পরীক্ষার প্রশ্ন ভীষণ কঠিন, আমি হিমসিম খাচ্ছিলাম এনসার করতে। চোখ পরল তোর দিকে, দেখি বেঞ্চে থুতনি দিয়ে অসহায় এর মত তাকিয়ে আছিস খাতার দিকে। মায়া লাগল, আহারে লিখতে পারছিস না। রিটেক কোর্স টা এই বছর পাশ করলি।
২৫ নভেম্বর ২০২১,
তুই আমাকে বিকেলে কল করলি অর্পা কই তুই। ভার্সিটি ডে আমি বের হব না কেনো, জোরাজোরি করেও বের করতে পারলি না। আমি একটু পরে কল দিয়ে বললাম আমি বের হব, তুই ততক্ষণে শীববাড়ি চলে গেছিস। সেদিন বের হওয়া হলো না। পরেরদিন হলের নিচে তোর আগের হরনেট টা নিয়ে এসে কল দিলি, নাম। আমি তো অবাক এ পাগল বলে টা কি, এভাবে বাইকে চড়ে যাব সবাই কি বলবে! তুই তো নাছোড়বান্দা। নামতে বলছি নাম। তারপর আর কি নামলাম। গেলাম বার্গার খেতে। নাগা নিয়ে তোর সে কি নাকের জ্বল চোখের জ্বল এক হয়ে গেলো। এরপর আস্তে আস্তে শুরু হলো আমাদের ডেটিং পিরিয়ড।
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২,
তুই প্রপোজ করলি তাও এটা বলে যে আজকে থেকে সব মেয়ে বাদ, তুই আমার সেটেল হওয়া অবধি ওয়েট করবি। আমি তোকেই বিয়ে করব। সেদিন আমরা ভীর- জারা সিনেমাটা দেখছিলাম।
আমরা একবছর একদম উথাল পাথাল প্রেম করলাম।এরপর আমাদের লাগল একদিন মহা ক্যাচাল। ব্যাচমেট, কেউ কাউকে গুনলাম না। যাহ থাকবই না।
আমি কেঁদে একদম একাকার। তুই তো মুখ বোঝা এমনিই। কাউকে বলতে পারলি না খালি সিগারেট আর সিগারেট।
১২ দিন পর আমরা আর পারলাম না। সব ভেঙে চুরে কান্না কাটি শেষে আমি তোকে তপন দার দোকানে জড়ায়ে ধরলাম।
এরপর তিন মাস একদম একের প্রেম চলল। তারপর আবার লাগল, এবার ও কেউ কাউকে পাত্তা দিলাম না। করলাম ব্রেকআপ।
টিকল না ৭ দিন ও।
তারপর আবার সব ঠিক করে র্যাগ এর আগে লাগল মহা ক্যাচাল। তুই কনভেইনার সে কি ব্যস্ত। আমি তো পাই ই না।
৯ অক্টোবর ২০২৩,
তোর জন্মদিন, আমি রান্না করে রাখলাম তুই র্যাগ নিয়ে দৌড়াতে গিয়ে আর রান্না খাওয়ার সময় হলো না। সে কি অভিমান আমার। এই নিয়ে দিলাম র্যাগ এর আগে আগে সব শেষ করে। তখন একটা বাজে অবস্থাই হলো আমাদের, একেতো র্যাগ তারওপর জুনিয়র নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি। কেউ কারো মুখ দেখি না।
কিন্তু ভেতর তো পুরে ছাড়খার।
২৩ নভেম্বর ২০২৩,
তোর কল আসল, আমি ধরলাম না। সাগরে বললাম তোর বন্ধুকে বলবি আমাকে আর কল না দিতে। তুই সে কত বার কল, ম্যাসেজ। শেষে অনলাইন থেকে একটু কল দিয়ে হ্যালো হ্যালো শুনলি।
তখন তোর কি বাজে অবস্থা।
৩০ নভেম্বর ২০২৩,
রিফাহর জন্মদিন শেষে কাদের ভাই এর দোকানে গিয়ে দেখি তুই বসা, দেখেই আমি সরে চলে আসলাম। তুই আমাকে এক ঝলক দেখে চুপচাপ বের হয়ে বাইক এমন টান দিলি। আমি বুঝতে পারলাম যে জ্বলতেছে তাও আমি নরম হলাম না। একঘন্টা পর শুনি তুই রুপসা গিয়ে বাইক নিয়ে পরে গেছিস। কি যে কষ্ট টা পেলাম, তাও মন নরম হলো না।
১ ডিসেম্বর ২০২৩,
আননোন নম্বরের কল,
-হ্যালো কে
-আমি
শুনেই বুঝলাম আমার ছোট মানুষ টা।
হ্যাঁ বল
তুই একটু হলরোডে আয়, আমি প্রমান করে দিব জুনিয়র এর সাথে আমার কিছু নাই।
আমি এক্সিডেন্ট করছে দেখে আর আটকাতে পারলাম না, গেলাম। মুখের দিকে তাকায়ে কি মায়া লাগল।
কিছুক্ষন পরে আমার হাত ধরে, হাঁটুতে মাথা দিয়ে বললি
,” তোরে ছাড়া আমার শান্তি লাগে না। তুই পুরা আম্মুর মত। আমার সব আছে, শান্তি নাই, অর্পা তোর ফেরত আসা লাগবে না। আমি তোর বাসায় প্রস্তাব দেব ৬ মাস পর “
আমি তখনো চুপ।
– আচ্ছা শামীম চৈতির মত বিয়ে করে ফেলি তাহলে লুকায়ে।
আমি জানি দুজনের কেউ ই রেডি না বিয়ে করতে। তাও, কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারি না। কেনোভাবেই হারাতে দেব না।
আমি টাইম চাইলাম (যদিও নাটক)
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩,
আমি সিলেট যাব, মেহরাব কে বলে রাখছিলাম। মুগ্ধকে বললাম আমি সিলেট যাব। এখন ও ও যাবে। আমার জন্য হেলমেট কিনল। স্নিগ্ধ, জিদান ওদের ও রাজি করালো।
সেদিন আমাকে মেইনগেইট থেকে বাইকে চড়ায়ে সেই সাস্ট অবধি নিয়ে গেলো। কি কষ্ট টাই না হইছিলো একা একা এতদূর ড্রাইভ করতে! চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে। তাও সারাপথ কত কথা বললাম আমরা দুজন দুজনের সাথে।
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩,
আমরা শ্রীমঙ্গল গেলাম, রাতে ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলায় কত কত সত্যি বের হয়ে আসল তোর। আমি যে মাইর টা দিলাম……………
পরেরদিন আমাকে খুলনা নামায় দিলি।
২৯ মার্চ ২০২৪,
আমি ঢাকা গেলাম। আজমপুর যেখানে তোর লাশ টা পরে ছিলো। আমি ওখানে নামলাম। পরেরদিন তুই, আমি, স্নিগ্ধ, আদ্রিতা গেলাম শপিং এ। নিজে খুঁজে খুঁজে আমাকে পছন্দ মত দুইটা জামা কিনে দিলি। ট্রায়াল রুম থেকে বের হলেই তোর চোখে মুখে হাসি। jaaan কি সুন্দর লাগছে তোকে! আর তোর বরাবর এর প্রিয় মি. মানিকের বার্গার।ওটা তো আমাকে তুই খাওয়াবিই।
১১ মে ২০২৪,
রক এন্ড রিদম এর কনসার্ট। আমি আতিফ আসলামের টায় যেতে পারি নি। এটাতে যাবই। জিদান, স্নিগ্ধ, রাহাত ওরাও আসবে। গেলাম সবাই। গেটে ঢুকতে মারামারির মত শুরু হলে, তুই সে কি আমাকে বারবার হাত দিয়ে সরায়ে দিচ্ছিস। তোর গায়ে ধাক্কা লাগতেছে। আমার গায়ে যেন না লাগে। ঢুকলাম কোনোভাবে। কতবার জড়ায়ে ধরলাম, চুমু খাইলাম। শেষে অনি হাসান পূর্নতা বাজাবে আর মিজান গাইবে। আমি দেখি না। তুই আমাকে বললি কাঁধে বস। আমিও আর দুনিয়ায় চিন্তা না করে বসলাম কাঁধে চড়ে। তুমি সেই পূর্নতা আমার অনুভবে”” শুনলাম তোর কাঁধে বসেই। সেদিন সারারাত ঢাকা শহরে চড়ে বেড়াইলাম। হাতিরঝিল এসে আমি মুগ্ধর পিঠে হ্যালান দিয়ে বসে আছি। জিদান বললো,” অর্পার ই ভালো”
হ্যাঁ আসলেই জিদান। আমার ই ভালো ছিলো দিন।
পুরান ঢাকার কত খাবার দাবার খেলাম আমরা। টিএসসি তে স্নিগ্ধর সাথে গ্যান্জাম করলাম। পরেরদিন বিকেলে আমাকে বাসে তুলে দিলি তুই।
২১ জুন ২০২৪,
অঙ্কুরের বিয়েতে তোকে সারপ্রাইজ দিতে গেলাম। তুই আগেই টের পেয়ে গেছিলি। মন খারাপ আমার তাও তুই বললি, “jaaan ami ter pai nai.”
আন্টি আমাকে গরুর মাংস মুখে তুলে দিতে দিতে বলল দুই ছেলের একসাথে বউ আনব………।
আমি একটু সরে এসে তোর মুখে একটা খেজুর দিতে যাব তখনি দীপ ভাইয়া আর ভাবী সামনে পরে গেলো। তুই ও আচমকা দেখিয়ে বললি এইযে ভাইয়া, ভাবী। আমি লজ্জা পেলে ভাবী আমাকে নিয়ে একটু মজা করল।
খাইতে বসার আগে আমি বলে দিছিলাম সাদা পাঞ্জাবী, হলুদ লাগে না যেন। ঠিক ই লাগল। তুই দূর থেকে হাত উঁচু করে দেখায়ে বললি হলুদ লেগে গেছে অর্পা।
আমি দিলাম ঝাড়ি।
কিছুক্ষন পরে তুই নিচে নেমে গেলি লিফট ধরে ওই টাই তোকে আমার শেষ দেখা। কেনো যেন তাকায়ে ছিলাম তোর দিকে সেদিন তুই ও একটা হাসি দিয়ে আমাকে ফেলে নেমে গেলি।
jaaan মনে আছে তোকে আমি একটা ডাইরি লিখে দিছি। হাফ আমার লেখা, আমাদের কত ছবি সেখানে। বাকিটা আমি তোকে লিখতে বলছিলাম। জীবন আমাদের ওই ডাইরির কটা পেজের থেকেও ছোট তাই না বল?
কত তোলা তোলা করে ভালোবাসছিস আমায় তুই। এত ছোটাছুটির পরেও আমার কাছে এসে সব ঠান্ডা তোর। আমার এত মেজাজ, এর রাগ, সব কেমন চুপ করে সহ্য করে গেছিস। কোনদিন আমাকে একটা বাজে কথা বলিস নি। উঁচু গলায় কথা বলিস নি। আল্লাহ!!! কি আদর, কি আদর। কত যত্নে আমাকে তুই রাখতি মুগ্ধ একবার মনে করে দেখ।
আজকে তুই বীরের মত সবার মনে বেঁচে আছিস। জান আমি তো আগেই জানতাম তুই বীর। তুই আমার মুগ্ধ। আমার একটাই মুগ্ধ ছিলো।
এখন আর আর্তনাদ করি না। I am so proud of you jaaan.
I mean you are a hero. A great soul.
আমার কাছে তুই তো একটা বাচ্চা। যেই মাথায় তোর গুলি টা লাগলো মুগ্ধ, আমি কত সহস্র বার হাত বুলায়ে দিছি, আদর করে দিছি।আজকে আর আমি তোকে ছুঁতে পারি না। কিন্তু তুই তো নাকি আর আমার একার নাই, পুরো দেশের হয়ে গেছিস।
মেনে নিলাম।
সারাজীবন তো তোর আদর সোহাগের ভাগ কাউকে দেই নি, আজকে তাই কাউকে পাচ্ছি না যাকে জিজ্ঞেস করতে পারি তোমার কি একই হাহাকার!
আমার মুগ্ধ আর নেই।
“কিন্তু তুই আমাকে পূর্ন করে দিয়ে গেলি মুগ্ধ।
একটা ছবি কেবল আমি আমার টাইমলাইন এ রাখতে চাই আমাদের। দয়া করে আমাকে আর মুগ্ধকে সবাই রেসপেক্ট করবেন। আমি এই পোস্ট টা হাজার বার দেখতে চাই।
আমি একদিন রাগ করছি, তুই নিচে বসে আমাকে মানাচ্ছিস। এক হাত দিয়ে আমার গাল টেনে ধরে বসে আছিস আমার হাঁটুর কাছে।
এত আদরে রেখে আজকে কেমন দেশের হয়ে গেলি!