Dil mein ab yun tere bhoole hue gham aate hain
by
Faiz Ahmed Faiz
Dil mein ab yun tere bhoole hue gham aate hain
Jaise bichde hue ka’abe mein sanam aate hain
Ek ek karke hue jaate hai tare roushan
Meri manzil ki taraf tere kadam aate hain
Raqs-e-mai tez karo saaz ki lai tez karo
Su-e-maikhaana safiraan-e-haram aate hain
Kuch hamin ko nahin ahsaan uthaane ka dimaag
Woh to jab aate hain, maail-ba-karam aate hain
Aur kuch der na guzre, shab-e-furqat se kaho
Dil bhi kam dukhta hai woh yaad bhi kam aate hain
Like forsaken idols returning to temples
translated by
Mustansir Dalvi
Like forsaken idols
Returning to temples,
my heart fills with lost
memories of your sorrows.
One by one, stars
turn themselves on,
in step with you, as you
make your way to my abode.
Pick up the rhythm of the lute,
pour wine with greater abandon.
Look! The keepers of idols
make their way to the drinking house.
Whenever they arrived
they were inclined to kindness;
but we lacked the grace
to appreciate their favor.
Go tell the night of separation –
do not tarry much longer:
the heart hurts less now
the less I think of her.
বইয়ের খরচাপাতি
(২০১৪ সাল)
■জাতীয় সাহিত্য প্রকাশন–এর পুরোধা জনাব মোরশেদ আলম–এর মতে–
১০ ফর্মার একটি বই প্রকাশের আনুমানিক খরচ :
●কভার পেপার (দুই রকম আর্টপেপার
অফসেট-১২০ গ্রাম বা ১০০গ্রাম হতে পারে)- ২৫০০/=
●কভার ডিজাইন পজেটিভ সহ চার কালার -৩০০০/=
●কভার প্লেট ৪টি – ৮০০/=
●কভার ছাপা – ২০০০/=
●কভার লেমিনেশন – ৭৫০০/=
●বইয়ের কাগজ – ১১০০০/=
●বইয়ের ছাপা – ১০*৪০০=৪০০০/=
●মূল বইয়ের প্লেট একপোজ সহ ১০টা
(একপোজ= ট্রেসিং প্লেট) -৪৪০০/=
● বই বাঁধাই – ১০,০০০/=
● বই কম্পোজ ১০ ফর্মা
(ট্রেসিং সহ) – ১০*৬০০=৬০০০/=
●প্রুফ রিডিং – ৩০০০/=
১০ ফর্মায় প্রতিবারে প্রুফ রিডিং ১০০০/= করে তিনবারে ৩০০০/=টাকা
■জলছবি বাতায়ন প্রকাশনার সঞ্চালক জহিরুল ইসলামের বর্ণনা মতে :
১.
সাইজ : ৭.২৫×৯.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ১ (৮ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : চার কালার
বাঁধাই : স্ট্যাপলার
কভার পেপার : ৩০০/৩৫০ গ্রাম ওয়ান সাইড গ্লোসি বোর্ড
অলঙ্করণ : হবে
সংখ্যা : ৫০০ কপি
মোট খরচ : ২১,০০০ টাকা
যে ধরনের বই হতে পারে : ছোটদের গল্প/ছড়া।
২.
সাইজ : ৭.২৫×৯.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ১ (৮ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : স্ট্যাপলার
কভার পেপার : ৩০০/৩৫০ গ্রাম ওয়ান সাইড গ্লোসি বোর্ড
অলঙ্করণ : হবে
সংখ্যা : ৫০০ কপি
মোট খরচ : ১৬,০০০ টাকা
যে ধরনের বই হতে পারে : ছোটদের গল্প/ছড়া।
৩.
সাইজ : ৭.২৫×৯.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ২ (১৬ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : চার কালার
বাঁধাই : স্ট্যাপলার
কভার পেপার : ৩০০/৩৫০ গ্রাম ওয়ান সাইড গ্লোসি বোর্ড
অলঙ্করণ : হবে
সংখ্যা : ৫০০ কপি
মোট খরচ : ৩১,৫০০ টাকা
যে ধরনের বই হতে পারে : ছোটদের গল্প/ছড়া।
৪.
সাইজ : ৭.২৫×৯.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ২ (১৬ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : স্ট্যাপলার
কভার পেপার : ৩০০/৩৫০ গ্রাম ওয়ান সাইড গ্লোসি বোর্ড
অলঙ্করণ : হবে
সংখ্যা : ৫০০ কপি
মোট খরচ : ২৩,০০০ টাকা
যে ধরনের বই হতে পারে : ছোটদের গল্প/ছড়া।
৫.
সাইজ : ৭.২৫×৯.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৩ (২৪ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : চার কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে
সংখ্যা : ৫০০ কপি
মোট খরচ : ৪৭,৫০০ টাকা
যে ধরনের বই হতে পারে : ছোটদের গল্প/ছড়া।
৬.
সাইজ : ৭.২৫×৯.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৪ (৩২ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : চার কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে
সংখ্যা : ৫০০ কপি
মোট খরচ : ৫৭,০০০ টাকা
যে ধরনের বই হতে পারে : ছোটদের গল্প/ছড়া।
৭.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৩ (৪৮ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ১৯,৫০০ টাকা। ৫০০ কপি ২৫,৫০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা।
৮.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৪ (৬৪ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ২২,৫০০ টাকা। ৫০০ কপি ২৮,৫০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
৯.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৫ (৮০ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ২৫,০০০ টাকা। ৫০০ কপি ৩১,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
১০.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৬ (৯৬ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ২৮,০০০ টাকা। ৫০০ কপি ৩৪,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
১১.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৭ (১১২ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ৩০,৫০০ টাকা। ৫০০ কপি ৩৭,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
১২.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৮ (১২৮ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ৩৩,০০০ টাকা। ৫০০ কপি ৪০,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
১৩.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ১০ (১৬০ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ৩৬,০০০ টাকা। ৫০০ কপি ৪৩,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
১৪.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি (পেপারব্যাক)
ফর্মা সংখ্যা : ১০ (১৬০ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : পেপারব্যাক। তবে ফ্ল্যাপ থাকবে।
কভার পেপার : ৩০০/৩৫০ গ্রাম ওয়ান সাইড গ্লোসি বোর্ড/আর্ট কার্ড
অলঙ্করণ : কয়েকটি স্কেচ হবে
মোট খরচ : ৩০০ কপি ৩৬,০০০ টাকা। ৫০০ কপি ৪৩,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : প্রবন্ধ/উপন্যাস।
১৫.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ১৫ (১৬০ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ৪৮,৫০০ টাকা। ৫০০ কপি ৫৬,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার শুরু ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর। ১৮৫৭ সালে ভারতের বড় লাট লর্ড ক্যানিং ‘দ্য অ্যাক্ট অফ ইনকরপোরেশন’ পাশ করে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল কোলকাতা, বোম্বে এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে থেকেই ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা ছিল কিন্তু এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয় ইউরোপিয় মডেলে।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ছিল উঁচু। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিলেন মূলত পশ্চিম বঙ্গের উঁচুতলার হিন্দু সন্তানরা।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের আগে অবিভক্ত বাংলায় ১৯টি কলেজ ছিল। তার মধ্যে পূর্ব বাংলায় নয়টি। তবে সেটাই পর্যাপ্ত ছিল বলে মনে করেননি তখনকার পূর্ব বাংলার মানুষ।
কেন পূর্ববঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন ছিল:
১৯০৫ সালে বাংলা প্রেসিডেন্সি ভাগ করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে নতুন এক প্রদেশ করা হয়। যার প্রচলিত নাম বঙ্গভঙ্গ।
পূর্ববঙ্গে পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসা ছিল এই উদ্যোগের একটি অংশ।
বঙ্গভঙ্গের এই সময়টা ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য, মাত্র ছয় বছর। কারণ এর মধ্যেই পশ্চিম বঙ্গের হিন্দু নেতারা প্রবল আন্দোলন করেন এই বঙ্গভঙ্গের।
এদিকে মুসলমান নেতারা নতুন প্রদেশ হওয়াতে শিক্ষাসহ নানা সুবিধা পাবেন এই আশায় উজ্জীবিত হন।
কিন্তু গোটা ভারতবর্ষে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং তাদের বিরোধিতার মুখে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়।
ফলে মুসলমানদের ক্ষোভ আরো পুঞ্জিভূত হতে থাকে। তারা মনে করে অর্থনৈতিক বৈষম্যের সাথে সাথে শিক্ষা ক্ষেত্রেও তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
লেখক এবং গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা’ বই এ লিখেছেন “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বাঙালী মুসলমানদের ক্ষোভ ছিল ১৯০৫- এ পূর্ব বাংলা এবং আসাম প্রদেশ গঠনের অনেক আগে থেকেই। … ক্ষোভের কারণ শুধু হিন্দু প্রাধান্য নয়, শিক্ষাক্রমে হিন্দুধর্ম প্রাধান্য পাওয়ায় মুসলমানদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়”।
যারা বিরোধিতা করেছিলেন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নাম সৈয়দ আবুল মকসুদের ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা’ বইতে উঠে এসেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোকজনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন বলে উল্লেখ করা হয়।
ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালে তাঁর ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাৎ এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।
এসংক্রান্ত বিভিন্ন বইতে উঠে এসেছে, লর্ড হার্ডিঞ্জ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী মূল্যে অর্থাৎ কিসের বিনিময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকবেন?
শেষ পর্যন্ত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধিতার অবসান করেছিলেন। পরবর্তীতে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগে সহযোগিতা করেন।
তার সঙ্গে ছিলেন স্যার নীলরতন সরকার।
কেন এই বিরোধিতা?:
কথা সাহিত্যিক এবং প্রাবন্ধিক কুলদা রায় তাঁর ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও রবীন্দ্রনাথ’ নামক প্রবন্ধে লিখেছেন মূলত-বিরোধিতা করেছিলেন তিন ধরনের লোকজন-
এক. পশ্চিমবঙ্গের কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কোনো লাভ নেই। পূর্ববঙ্গের মুসলমানদেরই লাভ হবে। তাদের জন্য ঢাকায় নয় পশ্চিমবঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়াটাই লাভজনক।
দুই. পূর্ব বাংলার কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে ১০০০০ জনের মধ্যে ১ জন মাত্র স্কুল পর্যায়ে পাশ করতে পারে। কলেজ পর্যায়ে তাদের ছাত্র সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা খুবই কম হবে।
পূর্ববঙ্গে প্রাইমারী এবং হাইস্কুল হলে সেখানে পড়াশুনা করে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়বে। আগে সেটা দরকার। এবং যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে মুসলমানদের জন্য যে সরকারী বাজেট বরাদ্দ আছে তা বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যয় হয়ে যাবে। নতুন করে প্রাইমারী বা হাইস্কুল হবে না। যেগুলো আছে সেগুলোও অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় চান নি।
তিন. পশ্চিমবঙ্গের কিছু হিন্দু মনে করেছিলেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ কমে যাবে। সুতরাং কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কীভাবে? এই ভয়েই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি বিরোধিতা করেছিলেন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা কী ছিল সেটা নিয়ে বিস্তর লেখা-লেখি হয়েছে বছরের পর বছর ধরে।
যারা বলেছেন তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন তারা স্বপক্ষে দালিলিক কোন তথ্য প্রমাণ দেন নি।
সেই সময়কার সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা এবং রবীন্দ্রনাথের সেই সময় যাদের সাথে উঠা-বসা ছিল তাদের কয়েকজন ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে।
তাই অনেকেই সহজ সমীকরণ মিলিয়ে লিখেছেন তিনিও এর বিপক্ষেই ছিলেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা’ বই এ লিখেছেন “শ্রেণীস্বার্থে রবীন্দ্রনাথও ছিলেন কার্জনের (লর্ড কার্জন) ওপর অতি ক্ষুব্ধ। কার্জনের উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত মন্তব্যের তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কলকাতার হিন্দু সমাজে। তাতে রবীন্দ্রনাথও অংশগ্রহণ করেন। তিনি যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন,তাতে কিছু ছিল যুক্তি, বেশির ভাগই ছিল আবেগ এবং কিছু ছিল ক্ষোভ”।
আবার যারা রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করেননি বলেছেন তাঁরা এর স্বপক্ষে বেশ কিছু ঘটনা এবং এবং দিন তারিখের কথা উল্লেখ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেন ” কেউ কেউ কোনো প্রমাণ উপস্থিত না করেই লিখিতভাবে জানাচ্ছেন যে, ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ কলকাতায় গড়ের মাঠে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে এক বিরাট জনসভা হয়। ও রকম একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বটে, কিন্তু তাতে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি ছিল অসম্ভব, কেননা সেদিন তিনি কলকাতাতেই ছিলেন না। ১৯১২ সালের ১৯ মার্চ সিটি অব প্যারিস জাহাজযোগে রবীন্দ্রনাথের বিলাতযাত্রার কথা ছিল। তাঁর সফরসঙ্গী ডাক্তার দ্বিজেন্দ্রনাথ মিত্র জাহাজে উঠে পড়েছিলেন, কবির মালপত্রও তাতে তোলা হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু আকস্মিকভাবে ওইদিন সকালে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে মাদ্রাজ থেকে তাঁর মালপত্র ফিরিয়ে আনা হয়। কলকাতায় কয়েক দিন বিশ্রাম করে ২৪ মার্চ রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে চলে আসেন এবং ২৮ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে সেখানে বসে ১৮টি গান ও কবিতা রচনা করেন”।
আবার সেই সময়কার সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গবেষক তৌহিদুল হক বলছিলেন ” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে তিন শ্রেণীর মানুষ বিরোধিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে আমরা রবীন্দ্রনাথকে তৃতীয় কাতারে রাখতে চাই। কারণ তারা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উচ্চবর্ণের কিছু হিন্দু সমাজ। তাঁদের সাথে বিশেষ করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর সাথে রবীন্দ্রনাথের একাধিকবার বৈঠক,আলোচনা হয়েছে শিলাইদহ যাওয়ার আগেও।এ থেকে আমরা অনুধাবন করতে চাই সেখানে পূর্ববঙ্গের সার্বিক উন্নতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। তবে এরও কোন স্পষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই”।
যারা পক্ষে কাজ করেছিলেন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা যে হয়েছিল নানা পক্ষ থেকে সেটা ইতিহাস ঘাটলে তথ্য পাওয়া যায়।
কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আবশ্যকতা রয়েছে সেটা বোঝাতে এবং প্রতিষ্ঠার ব্যাপার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন যাঁরা তাদের কথা না বললেই নয়।
এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। কিন্তু, হঠাৎ করে ১৯১৫ সালে নবাব সলিমুল্লাহের মৃত্যু ঘটলে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী শক্ত হাতে এই উদ্যোগের হাল ধরেন।
অন্যান্যদের মধ্যে আবুল কাশেম ফজলুল হক উল্লেখযোগ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় পূর্ব বাংলার হিন্দুরাও এগিয়ে এসেছিলেন।
এদের মধ্যে ঢাকার বালিয়াটির জমিদার অন্যতম। জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় তাঁর পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে।
_________________________
ফারহানা পারভীন, বিবিসি বাংলা, ঢাকা
১ জুলাই ২০১৮
https://www.bbc.com/bengali/news-44609891
Follow Me