প্রকাশনা শিল্প : বর্তমান প্রেক্ষাপট
বর্তমান সভ্যতা প্রকাশনা শিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে মানুষ ব্যক্তিগত থেকে রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক তথা সকল পর্যায়ে প্রকাশনা শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। ফলে এ শিল্পে কাজ করার সুযোগও বিস্তৃত। বর্তমান প্রজন্মের তরুণ তরুণীরাও এ শিল্পের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। তা ছাড়া এ শিল্পের অনেক ধাপ হওয়াতে যে কোনো ধাপে ছোট পরিসরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যেখানে কাজ করতে তেমন কোনো পুঁজির দরকার হয় না। যেমন- যে কেউ ইচ্ছে করলেই নিজ বাড়িতে কম্পোজ বা ডিজাইনের কাজ করে বেশ ভালো আয় করতে পারেন। আবার বড় বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ তো রয়েছেই। সংবাদপত্রকে বাদ দিলে প্রকাশনা শিল্পকে প্রধান দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়-
১. সৃজনশীল প্রকাশনা
২. একাডেমিক বই-পত্রের প্রকাশনা
সৃজনশীল প্রকাশনা বলতে আমরা সচরাচর একাডেমিক বইয়ের বাইরের বই যেমন Ñ গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি বইকে বুঝি। আর একাডেমিক প্রকাশনা হচ্ছে পাঠ্যবই এবং সেগুলোর সহায়িকা নোট বা গাইড।
এ শিল্পের প্রধান ব্যক্তিবর্গ
প্রকাশনা শিল্প একটি বিস্তৃত বিষয়। লেখকের লেখা কম্পিউটারে কম্পোজ হয়ে, ছাপাখানায় ছেপে, প্রয়োজনে বাইন্ডিং হয়ে, পাঠকের দোরগোড়ায় পৌঁছানো পর্যন্ত সব কাজই প্রকাশনা শিল্পের অন্তর্গত। তবে শুধু কম্পোজ, ছাপাখানা আর বাইন্ডিং-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, একাজের পরিধি ব্যাপক বিস্তুৃত। এ শিল্পে যারা প্রধান ভূমিকা পালন করে তাদের ধাপগুলো হলো-
১. লেখক/পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতকারক
২. প্রধান সম্পাদক ৩. সম্পাদক
৪. কম্পোজ ৫. প্রুফ রিডিং
৬. শিল্প নির্দেশক (প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ)
৭. ট্রেসিং/আউটপুট ৮. উৎপাদন
৯. প্রেস/বাইন্ডিং ১০. মার্কেটিং
শুধু এখানেই শেষ নয়, বই/ প্রকাশনা সামগ্রী প্রকাশিত হওয়ার পর তা বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা। এসব ধাপের সমন্বিতরূপই প্রকাশনা শিল্প।
ক্যারিয়ার গড়ার পূর্ব প্রস্তুতি
প্রকাশনা শিল্পে ক্যারিয়ার গড়তে হলে, প্রথমেই নির্বাচন করতে হবে আপনি কোন বিভাগে কাজ করতে চান। মেধাবী হলে অবশ্যই একাডেমিক প্রকাশনায় কাজ করতে পারেন। কিন্তু সৃজনশীল শাখায় কাজ করতে হলে মননশীল দৃষ্টিভঙ্গি থাকা চাই। সৃজনশীল শাখায় কাজ করতে আপনাকে দেশ-বিদেশের শিল্প-সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ক বই পড়তে হবে। সম্পাদনার যোগ্যতাটাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমান প্রকাশনা জগৎটা যেহেতু শুধু লেখা আর সম্পাদনায় সীমাবদ্ধ নয় তাই এ পেশায় আরো দশটি ক্ষেত্রের মত অনেক সুযোগ রয়েছে। প্রকাশনা শিল্পের ওপর পড়ার বিষয় হিসেবে আলাদা কোন সাবজেক্ট না থাকলেও এ পেশার কাজ করতে প্রয়োজন আগ্রহ আর দৃঢ় মনোবল। সরকারি গ্রাফিক্স আর্ট ইনস্টিটিউটে এ শিল্পের বিষয় নিয়ে লেখা পড়া করানো হয়। চারুকলার শিক্ষার্থীরাও সহজেই এখানে কাজ করতে পারেন। কম্পিউটারের কাজ বিশেষ করে কম্পোজ, গ্রাফিক্স যারা ভালো পারেন তারাও এ শিল্পে কাজ করতে পারেন।
কাজের ধাপ ও ক্ষেত্র
প্রকাশনা শিল্পে রয়েছে কাজের নানান ধাপ। যে কেউ তার যোগ্যতানুযায়ী পছন্দমত ক্ষেত্রে কাজ করতে পারেন। কিংবা পছন্দমত প্রতিষ্ঠান গড়তে পারেন। তবে একে প্রধান তিনটি ধাপে ভাগ করা চলে-
১. প্রি-প্রোডাকশন (উৎপাদনপূর্ব)
২. প্রোডাকশন (উৎপাদন)
৩. পোস্ট পোডাকশন (উৎপাদনোত্তর)
প্রি–প্রোডাকশন
প্রি-প্রোডাকশন বা উৎপাদন পূর্ববর্তী ধাপে, প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকাশনা শিল্পে লেখকের লেখা, পাণ্ডুলিপি সম্পাদকের সম্পাদনা, অনুবাদের কাজ থাকলে অনুবাদ, আলোকচিত্রীর আলোকচিত্র, প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ, কম্পোজ, গ্রুফ রিডিং, পেস্টিং ইত্যাদি কাজগুলো হয়ে থাকে। এ ধাপে যারা কাজ করেন তারা হলেন-
১. প্রকল্প সমন্বয়কারী ২. লেখক
৩. অনুবাদক ৪. পাণ্ডুলিপি সম্পাদক
৫. কম্পোজার ৬. গ্রুফ রিডার
৭. প্রচ্ছদ এবং অলঙ্করণ শিল্পী ইত্যাদি
এরা সবাই মিলে যে কোনো লেখাকে চূড়ান্ত ছাপানোর জন্য পাঠান “প্রোডাকশন” ধাপে।
প্রোডাকশন (উৎপাদন)
এ ধাপে প্রস্তুতকৃত লেখাটি প্রোডাকশন ম্যানেজারের নেতৃত্বে ছাপানোর কাজটি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কাগজ ক্রয়, প্রেস নির্বাচন, ছাপার মান নিয়ন্ত্রণ, ছাপানোর পরে বাইন্ডিং খানায় পাঠিয়ে বাইন্ডিং করা ইত্যদি কাজগুলো হয়ে থাকে। এখানে কাজ করেন-
১. উৎপাদন কর্মকর্তা ২. পেস্টিং ম্যান
৩. প্লেট মেকার ৪. প্রেস বা ছাপাখানা
৫. বাইন্ডিং ম্যান
এরা পুরো প্রকাশনীর কাজ সম্পন্ন করে বিক্রির জন্য মার্কেটিং-এ পাঠান।
পোস্ট–প্রোডাকশন
প্রস্তুতকৃত বইটি বাজারজাতকরণই এ পর্যায়ের প্রধান কাজ। প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য যাতে বাজারজাত হয় এবং বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান লাভবান হয় সে কাজটি এ পর্যায়ে হয়ে থাকে। মার্কেটিং হলো এ পর্যায়ের প্রধান কাজ। ভালো সেল দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় এ বিভাগ। যেমন : প্রকাশনার প্রসারে বিজ্ঞাপন। প্রয়োজনে লিফলেট বিতরণ, ব্রুশিয়ার, ব্যানার ইত্যাদি তৈরি কিংবা শিক্ষকদের কনভেন্স তথা বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশনার সার্কুলেশন বৃদ্ধির কাজটি করে থাকে এ বিভাগ।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান
দেশে বর্তমানে হাজারের ওপর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিদ্যমান প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়
১. সৃজনশীল প্রকাশনা
২. ইসলামী প্রকাশনা
৩. একাডেমিক বই-পত্রের প্রকাশনা
সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে- অন্য প্রকাশ, অনন্যা, মিজান পাবলিকেশন্স, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, প্রীতি প্রকাশনী, কাকলী, ইউপিএল, মাওলা বাদ্রার্স, হাতে খড়ি, বিদ্যা প্রকাশ, গতিধারা, হক্কানী পাবলিকেশন্স ইত্যাদি।
ইসলামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে- আধুনিক প্রকাশনী, মদীনা পাবলিকেশন্স, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, আহসান পাবলিকেশন্স, শতাব্দী প্রকাশনী, আল কুরআন একাডেমী লন্ডন, ছারছীনা প্রকাশনী, ইসলামিয়া কুতুবখানা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
একাডেমিক প্রকাশনার মধ্যে স্কুল এবং মাদরাসা দু’ভাগে রয়েছে। স্কুল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স, লেকচার পাবলিকেশন্স, জুপিটার গাইড হাউজ, হাসান বুক ডিপো, গ্যালাক্সি গাইড, কাজল ব্রাদার্স, এম আব্দুল্লাহ অ্যান্ড সন্স ইত্যাদি।
মাদ্রাসা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হলো- কামিয়াব প্রকাশনী, পাঞ্জেরী ইসলামিক পাবলিকেশন্স, আল ফাতাহ পাবলিকেশন্স, আল বারাকা, আল মদীনা, আল আরাফা, মিল্লাত, উইনার ইত্যাদি। এছাড়াও বাংলা একাডেমী, ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনাসংস্থা, নয়া দিগন্তসহ বিভিন্ন পত্রিকার নিজস্ব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
গড়তে পারেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান
চাইলে আপনিও গড়তে পারেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। প্রকাশনা শিল্প তাবৎ পৃথিবীর অন্যান্য শিল্প হতে একটু আলাদা। আপনার আর্থিক যোগানের পাশাপাশি দেশের জন্য কিছু করার সুযোগ রয়েছে এ শিল্পে। আপনিতো বটেই আপনার তত্ত্বাবধানে হয়তো এমন কোনো স্টার জন্ম নেবে যে পরিচর্যার অভাবে নিজের প্রতিভা বিকাশ করতে পারছিল না। আপনার সকল প্রচেষ্টা হবে সৃজনশীল যার মাধ্যমে সৃষ্টি হবে নতুন নতুন বই, জ্ঞানের নতুন ক্ষেত্র। তবে এ প্রতিষ্ঠান গড়তে হলে আগেই সিদ্ধান্ত নিন কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান আপনি করবেন- সৃজনশীল, একাডেমিক না উভয়ই? তবে সবক্ষেত্রেই অর্থ যোগানের বিষয়টি আসবে। সৃজনশীল প্রকাশনার ক্ষেত্রে একাডেমিকের চেয়ে একটু কম পুঁজি লাগতে পারে। সাথে সাথে আপনার থাকতে হবে অভিজ্ঞতা, সৃষ্টিশীলতা, সততা, পরিশ্রম এবং দক্ষতা। এ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় অভিজ্ঞতার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। এটি যেমন প্রতিযোগিতামূলক আবার তেমনি জটিল কাজ। বই নির্বাচন এবং পাণ্ডুুলিপি নির্বাচনে সাবধানতা অনস্বীকার্য। বর্তমান বাজার, সময়ের চাহিদা এবং ভবিষ্যৎ বিষয় মাথায় রেখেই এসব নির্বাচন করতে হবে। আপনি এভাবে বই নির্বাচন করে কোয়ালিটি প্রোডাকশন এবং যথার্থ বিপণনের ব্যবস্থা করতে পারলে আপনার সফলতা নিশ্চিত। বইয়ের দাম একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার খরচের সাথে সঙ্গতি রেখে সেটা নির্ধারণ করুন। বই বিক্রির ক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন সোর্স প্রয়োজন। এজন্য লাইব্রেরি, এনজিও প্রতিষ্ঠান, বইয়ের দোকান, শোরুম ইত্যাদির সাথে যোগাযোগ রাখুন। বইমেলার কথা মাথায় রেখে তখন সেভাবে প্রোডাকশনের ব্যবস্থা করতে পারেন। একাডেমিক বইয়ের ক্ষেত্রে বাজারের অন্যান্য বইয়ের তুলনায় আপনার এক্সক্লুসিভ কিছু থাকতে হবে। তবেই প্রকাশক হিসেবে সফলতার মুখ আপনি দেখবেন।
ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
প্রকাশনা শিল্পে রয়েছে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার। বর্তমান এটি একটি যেমন চ্যালেঞ্জিং পেশা তেমনি আবার প্রতিযোগিতাও এখানে রয়েছে। প্রকাশক হিসেবে যেমন আপনার প্রতিষ্ঠানের আয় আপনি পাবেন, আবার লেখক হিসেবে রয়েছে অনেক সুযোগ। লেখকেরা তাদের যোগ্যতা দিয়ে বাজারদখল করতে পারলে শুধু একটা প্রকাশনী নয় হাজারটা প্রকাশনী আপনাকে হাতছানি দিবে। আপনি যদি জনপ্রিয় লেখক হন তাহলে তো কথাই নেই। যেমন ধরুন, হুমায়ুন আহমেদ। প্রতি বছর যদি তাঁর ২০টি বই বের হয়, প্রত্যেক বই থেকে তিনি ১ লাখ টাকা করে পেলে, মোট হবে ২০ লাখ। ১২ মাসে ২০ লাখ হলে মাসে প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার। যা হোক এখানে শুধু লেখক হিসেবেই না অন্য যে বিভাগ আছে সম্পাদক, শিল্প নির্দেশক, প্রুফ রিডার, অনুবাদক এভাবে সবারই অনেক আয়ের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ধীরে ধীরে বাড়ছে এ শিল্পের কলেবর। ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে সুনাম ও আয়ের জন্য নিঃসন্দেহে এটি ভালো ক্ষেত্র। এক দিকে যেমন আয়ের জন্য অন্যদিকে সুনাম কুড়ানোর জন্যও।
সংগ্রহ ২০১৮।
আমরা যারা লেখালেখি করি, ফেব্রুয়ারির গ্রন্থমেলা সামনে রেখে তাদের মধ্যে বই প্রকাশ নিয়ে একটা চিন্তাভাবনা শুরু হয়ে যায়। মুদ্রণ ও প্রকাশনা জগত্ সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই তাদেরকে এ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা দেওয়াই এই লেখার উদ্দেশ্য।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের খরচে যাদের বই প্রকাশিত হয় তাদেরকে খরচের বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। কিন্তু যারা প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তিতে কিংবা স্বউদ্যোগে বই ছাপাতে চান তাদের জন্য কিছু হিসাব-নিকাশ এখানে উল্লেখ করা হবে। তবে তার আগে সবার প্রতি অনুরোধ, আপনার লেখাটিকে যদি মানোত্তীর্ণ মনে করেন তাহলে ভালো কোনো প্রকাশকের কাছে জমা দিন। কোনো প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক যদি আপনার পাণ্ডুলিপিটি গ্রহণ করে এবং দুই বছর পরেও সেটা প্রকাশ করে তো তাদেরকে দেওয়াই উত্তম। কোনো প্রকাশক যদি একান্তই তা না করতে চায় তাহলে নিজ খরচে ভালো কোনো প্রকাশকের মাধ্যমে বইটি বের করুন। অনেক বড় প্রকাশকও আজকাল এ পদ্ধতিতে বই প্রকাশ করে। তবে ভালো প্রকাশক আপনার খরচে বই প্রকাশ করলেও পাণ্ডুলিপিটা মানসম্পন্ন কি না দেখে নেবে। পদ্ধতিটা হল এমন, প্রকাশক বইটা প্রকাশ করবে তবে আপনাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক বই ক্রয় করতে হবে। সেই নির্দিষ্ট সংখ্যাটা হতে পারে ৩৫০। তবে এই পদ্ধতির আসল ব্যাপারটি হচ্ছে প্রকাশক আপনার কাছ থেকে যে টাকাটা নেবে তা দিয়েই বইটা প্রকাশ করবে। তারা এর পেছনে কোনো ইনভেস্ট করবে না। এরা মূলত বই ছাপানোর সময়ই লেখকের কাছ থেকে তাদের লাভটা আদায় করে নেয়। আর অনেকে সংখ্যার হিসাবে কারচুপি করে। দেখা গেল, আপনার কাছ থেকে এক হাজার বই ছাপানোর খরচ নিয়ে তারা পাঁচশো বই ছাপল। তাই খেয়াল রাখবেন, যত সংখ্যক বই ছাপানো হবে বলে আপনার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে ততসংখ্যক বই ছাপা হচ্ছে কি না। কাগজ, ছাপা ও বাঁধাইয়ে মান বজায় থাকছে কি না। বইয়ের দাম ওই প্রকাশনীর ওই মানের অন্য বইয়ের সমতুল্য কি না।
নিজ খরচে যারা বই বের করবেন তারা নিচের খরচের হিসাবটা বোঝার চেষ্টা করবেন। যাদের এ ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই তাদের কাছে কঠিন মনে হলেও আশা করি এটা আপনাকে অনেক কাজে দেবে।
একটি বই প্রকাশ করতে হলে যথাক্রমে এই কাজগুলো আমাদের করতে হয় :
কম্পোজ
প্রুফ রিডিং এবং সম্পাদনা
অলঙ্করণ ও প্রচ্ছদ ডিজাইন
মেকআপ
পেস্টিং অথবা কম্পিউটারে ফর্মা সেটিং
ট্রেসিং ও পজেটিভ
প্রচ্ছদের পজেটিভ
প্লেট তৈরি
ইনার ও প্রচ্ছদের জন্য কাগজ
ছাপা
লেমিনেশন
বাঁধাই।
ফর্মা কাকে বলে : একটি ডিমাই (২৩ ইঞ্চি–১৮ ইঞ্চি) বা ক্রাউন (২০ ইঞ্চি–১৫ ইঞ্চি) কাগজ মানেই এক ফর্মা। সাড়ে আট বাই সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি (প্রায়) সাইজের বইয়ে ১৬ পৃষ্ঠায় এক ফর্মা আর বড় সাইজের বইয়ে ৮ পৃষ্ঠায় এক ফর্মা। ১৬ পৃষ্ঠায় ফর্মার বই করতে হলে ডাবল ডিমাই কাগজ এবং ৮ পৃষ্ঠার বইয়ে ডাবল ক্রাউন কাগজ ব্যবহার করা ভালো। এই সাইজ দুটো হল কমন সাইজ। আমাদের দেশের এবং বিদেশের প্রকাশকরা অবশ্য এর বাইরেও বিভিন্ন সাইজের বই বের করে। আমাদের দেশের মার্কেটে সাধারণত ডাবল ডিমাই এবং ডাবল ক্রাউন সাইজের কাগজ বেশি পাওয়া যায়। সেদিক দিয়ে একটা ডাবল কাগজের দুই দিক ছাপা মানে দুই ফর্মা। তার মানে একটা দশ ফর্মার বই ছাপতে আপনার দরকার হবে পাঁচটি ডাবল ডিমাই বা ডাবল ক্রাউন কাগজ। এভাবে ৫০০ বই করতে কতটি কাগজ দরকার তা আপনি সহজেই বের করতে পারবেন। বইয়ের ফর্মা সংখ্যার হেরফের হলেও হিসাব করতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এখন চটজলদি বের করে ফেলুন আপনার বইটি কয় ফর্মার হবে এবং কত শিট কাগজ আপনার দরকার। যত শিট কাগজ দরকার তাকে ৫০০ দিয়ে ভাগ করলেই আপনার রিমের হিসাবটি বের হয়ে আসবে। অর্থাত্ ৫০০ শিট=১ রিম। মনে রাখবেন, প্রিন্টিং ও বাইন্ডিংয়ের কয়েকটি পর্যায়ে যেহেতু অনেক কাগজ নষ্ট হয় তাই ৫০০ বই পেতে হলে আপনার কমপক্ষে আরও ৪০-৫০টি বইয়ের ম্যাটেরিয়াল বেশি দিতে হবে। বর্তমানে বাজারে ৮০ গ্রাম ডাবল ডিমাই বসুন্ধরা কাগজের মূল্য ২০০০ টাকা/রিম (প্রায়)। ডাবল ক্রাউন ১৪০০ টাকা/রিম (প্রায়)। এর চেয়ে বেশি এবং কম দামের কাগজ বাজারে আছে। ডিসেম্বরের দিকে কাগজের দাম সাধারণত বৃদ্ধি পায়। সাধারণ মানের বইয়ে ৬০ থেকে ৮০ গ্রাম কাগজ ব্যবহার হয়। গ্রাম হচ্ছে কাগজের পুরুত্বের হিসাব।
প্লেট কী : প্লেট হচ্ছে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি একটি মুদ্রণ অনুষঙ্গ। আপনার বইটি যদি ডাবল ডিমাই মেশিনে ছাপতে চান তবে বইটি যত ফর্মার হবে ততটি প্লেটের দরকার হবে। প্রতিটি প্লেটের মেকিং চার্জসহ দাম পড়বে ৩০০ টাকার মতো। তবে সময়ভেদে গত বছর ৬০০ টাকা পর্যনন্ত দাম ওঠে। প্লেট করার আগে আপনার লেখাগুলোকে ট্রেসিং বা পজেটিভ আকারে বের করতে হবে। বইয়ের মেকআপ করা থাকলে প্রতিটি ট্রেসিং নিতে খরচ পড়বে ১৫ টাকা। এক ফর্মায় ৮টি ট্রেসিং লাগে। আউটপুট নিতে হলে প্রতি বর্গইঞ্চি/প্রতি কালারের জন্য দরকার হবে ৫০ থেকে ৬০ পয়সা। পজিটিভ করতে হলে ফর্মা সেটিং আগে করে নিতে হবে। তবে বাংলা পজেটিভ করতে ফন্টের সমস্যার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কভার সাধারণত ছাপা হয় ডিমাই মেশিনে। প্রতিটি ডিমাই প্লেটের জন্য খরচ পড়বে ১৫০ টাকার মতো। উভয় ক্ষেত্রেই প্রতি কালারের জন্য একটি প্লেট ব্যবহার করতে হবে। তার মানে আপনার বইটির ভেতরের অংশ যদি এক কালারে ছাপা হয় তবে তার জন্য প্রতি ফর্মায় একটি প্লেট, যদি দুই কালারে ছাপা হয় তাহলে প্রতি ফর্মার জন্য দুটি প্লেট আর যদি চার কালারে ছাপা হয় তবে প্রতি ফর্মার জন্য চারটি প্লেট দরকার হবে।
বইয়ের প্রচ্ছদ সাধারণত চার কালারে ছাপা হয়, তাই এর জন্য চারটি ডিমাই সাইজের প্লেট দরকার হবে।
প্রচ্ছদ : বই বের করতে হলে প্রচ্ছদের দিকে বিশেষ খেয়াল দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে প্রচ্ছদশিল্পী থেকে শুরু করে সব কাজেই প্রফেশনালদের ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখা উচিত, প্রিন্টিং টেকনোলজি বেশ জটিল। তাই এ কাজে যে-ই জড়িত হবে সে যেন প্রিন্টিংয়ের এ টু জেড অবগত থাকে। আর বইয়ের মূল আকর্ষণই হচ্ছে প্রচ্ছদ এ কথা তো আমরা জানিই। বড় বড় আর্টিস্টরা একটি প্রচ্ছদের জন্য বিভিন্ন রকম পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন। তবে প্রচলিত মানের একজন প্রচ্ছদশিল্পীর একটি কাজের পারিশ্রমিক আড়াই হাজার টাকার মতো।
ইলাস্ট্রেশনের খরচ নির্ভর করে ভেতরে কী পরিমাণ কাজ থাকবে তার ওপর।
প্রুফ রিডিং এবং সম্পাদনা : বই প্রকাশের ক্ষেত্রে সম্পাদনা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কিন্তু আমাদের দেশে এই পেশায় যোগ্য লোক নেই বললেই চলে। তবু আপনার প্রকাশনাটি মানসম্পন্ন করতে চাইলে একজন যোগ্য সম্পাদক খুঁজে বের করা উচিত। সাধারণ মানের লেখকরা ধারণাই করতে পারেন না তার লেখাটিতে কত ধরনের খুঁত থেকে যায়। একজন ভালো সম্পাদক সেগুলো দূর করতে পারেন। তবে হতাশার কথা এই যে, আমাদের দেশে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রায় কারওই সম্পাদনার ওপর কোনো বাজেট থাকে না। তবে প্রুফ রিডাররা আছেন। তারা টুকটাক ভুলভাল যে ধরেন তাতেও বইয়ের মান কিছুটা বজায় থাকে। মনে রাখা দরকার, আপনি যা জানেন তার মধ্যে কতটুকু ত্রুটি আছে সে ব্যাপারে আপনার মোটেই ধারণা নেই। যদি থাকত তবে আপনি ভুল লিখতেন না। বই প্রকাশের পরে তাতে যে কোনো ধরনের ভুল থাকাটা কতটা হাস্যকর তারা মোটেই জানেন না যারা ব্যাপারটাকে উপেক্ষা করেন। কয়েকদিন আগে এক বইমেলায় একটি বইয়ের নাম দেখলাম, ‘লেলিন….’। বুঝতেই পারছেন যারা লেনিনের নামটি ঠিকমতো জানেন না, তারা লেনিন সম্পর্কে কী বই বের করবেন। আর একজন বিজ্ঞ পাঠক যখন বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ ধরনের ভুল দেখবেন তখন ওই বই হাতে নিয়েও দেখবেন না। তাই এই ব্যাপারটিতেও আপনাকে নজর দিতে হবে।
এবারে আমরা একটা বই প্রকাশের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য হিসাব করব। এই হিসাব চূড়ান্ত কোনো হিসাব নয়। এর চেয়ে কম অথবা বেশি বাজেটেও এ ধরনের একটা বই প্রকাশ সম্ভব হতে পারে। এটা নির্ভর করে আপনি কতটা কোয়ালিটি মেইনটেইন করবেন তার ওপর।
নমুনা হিসাব
বইয়ের সাইজ : ৫ ফর্মা (৮০ পৃষ্ঠা)
কাগজ : ৮০ গ্রাম বসুন্ধরা
ভেতরের ছাপা এক কালার
কভার চার কালার, লেমিনেশন ও বোর্ড বাঁধাই
সংখ্যা : ৫০০ কপি
ইলাস্ট্রেশন …………………. ০০০০
মেকআপ ও ট্রেসিং ………….. ২০০০
প্রুফ রিডিং ………………… ২০০০
কাগজ ২ রিম ১৫ দিস্তা ……… ৫৫০০
পেস্টিং …………………….. ৫০০
ডাবল ডিমাই প্লেট ৫টি ………. ১৫০০
ছাপা ৫ প্লেট ………………… ২০০০
আর্টপেপার ১২০ গ্রাম ৮ দিস্তা …… ১৫০০
৭০ গ্রাম জ্যাকেটের পেপার ৪ দিস্তা … ৪০০
প্রচ্ছদ ডিজাইন …………. ২০০০/২৫০০
প্রচ্ছদের পজেটিভ ……………… ৫০০
ডিমাই প্লেট ৪টা ………………. ৬০০
প্রচ্ছদ ছাপা …………………. ১৬০০
পোস্তানির কাগজ ………………. ৯০০
লেমিনেশন ……………………. ৭০০
বাঁধাই ………………. ……….৭৫০০
পোস্তানি প্রিন্ট ………………….. ৫০০
অন্যান্য ……………………… ১০০০
বিষয়টির প্রতি অনেকের আগ্রহের কারণে এই পোস্টটি দেওয়া হল। এই নমুনা হিসাবের সাথে আপনার বইয়ের সাইজ হিসাব করে বের করে নিন আপনার বইটি ছাপাতে কত টাকা খরচ হতে পারে। এ ব্যাপারে যে কোনো প্রশ্ন থাকলে এই পোস্টে আলাপ করতে পারেন।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
জলছবি প্রকাশন থেকে বই প্রকাশ করবেন কেন!
আপনারা হয়তো জানেন, জলছবি বাতায়ন সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি গ্রন্থ প্রকাশের পদক্ষেপ নিয়েছে। জলছবি বাতায়নের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নাম জলছবি প্রকাশন। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৮টি বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এত এত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থাকতে নিজের পকেটের পয়সায় জলছবি প্রকাশনকে কেন বেছে নেবেন বই প্রকাশের জন্য!
এর উত্তর হচ্ছে :
* জলছবি থেকে প্রকাশিত বইটি হবে সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন
* একটি সুন্দর এবং ভাষাগত দিক নিয়ে নির্ভুল ও সুসম্পাদিত গ্রন্থ প্রকাশের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে জলছবি পরিবারের
* জলছবি আপনার অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করবে।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
(জলছবি প্রকাশন, ২০১৮)
মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় রকমারির বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ কাজী কাওছার সুইটের সঙ্গে। তিনি অর্থসূচককে বলেন, গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত সব নতুন বইয়ের ক্ষেত্রে মেলার স্টলে প্রকাশকরা যে পরিমাণ মূল্য ছাড় দিচ্ছেন আমরাও সে পরিমাণ অর্থাৎ ২৫% হারে মূল্য ছাড় দিচ্ছি। তাছাড়া দেশের যে কোন প্রান্তে বসে বই অর্ডার দিলে আমরা পৌঁছে দিচ্ছি। এজন্য প্রতি অর্ডারে ক্রেতার কাছ থেকে ডেলিভারি চার্জ বাবদ নেওয়া হচ্ছে মাত্র ৩০ টাকা।
কাজী কাওছার সুইট আরও বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকশনা থেকে প্রকাশিত ১ হাজার ৯শ’র বেশি নতুন বই রকমারির ওয়েবসাইটে লিস্টেড হয়েছে। রকমারির ৩৫ জনের টিম মেলায় সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। যারা নিয়মিত প্রকাশকদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে লিস্ট করছেন।
মেলা চলাকালীন কি পরিমাণ বই বিক্রি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত এই ১০ দিনে রকমারি থেকে ৪ হাজার ৪১৮টি বিষয়ের ১০ হাজারের বেশি বই বিক্রি হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ১৮ লাখ টাকার মতো।
।।মার্চ ২০১৮।।
বইয়ের খরচাপাতি
(২০১৪ সাল)
■জাতীয় সাহিত্য প্রকাশন–এর পুরোধা জনাব মোরশেদ আলম–এর মতে–
১০ ফর্মার একটি বই প্রকাশের আনুমানিক খরচ :
●কভার পেপার (দুই রকম আর্টপেপার
অফসেট-১২০ গ্রাম বা ১০০গ্রাম হতে পারে)- ২৫০০/=
●কভার ডিজাইন পজেটিভ সহ চার কালার -৩০০০/=
●কভার প্লেট ৪টি – ৮০০/=
●কভার ছাপা – ২০০০/=
●কভার লেমিনেশন – ৭৫০০/=
●বইয়ের কাগজ – ১১০০০/=
●বইয়ের ছাপা – ১০*৪০০=৪০০০/=
●মূল বইয়ের প্লেট একপোজ সহ ১০টা
(একপোজ= ট্রেসিং প্লেট) -৪৪০০/=
● বই বাঁধাই – ১০,০০০/=
● বই কম্পোজ ১০ ফর্মা
(ট্রেসিং সহ) – ১০*৬০০=৬০০০/=
●প্রুফ রিডিং – ৩০০০/=
১০ ফর্মায় প্রতিবারে প্রুফ রিডিং ১০০০/= করে তিনবারে ৩০০০/=টাকা
■জলছবি বাতায়ন প্রকাশনার সঞ্চালক জহিরুল ইসলামের বর্ণনা মতে :
১.
সাইজ : ৭.২৫×৯.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ১ (৮ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : চার কালার
বাঁধাই : স্ট্যাপলার
কভার পেপার : ৩০০/৩৫০ গ্রাম ওয়ান সাইড গ্লোসি বোর্ড
অলঙ্করণ : হবে
সংখ্যা : ৫০০ কপি
মোট খরচ : ২১,০০০ টাকা
যে ধরনের বই হতে পারে : ছোটদের গল্প/ছড়া।
২.
সাইজ : ৭.২৫×৯.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ১ (৮ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : স্ট্যাপলার
কভার পেপার : ৩০০/৩৫০ গ্রাম ওয়ান সাইড গ্লোসি বোর্ড
অলঙ্করণ : হবে
সংখ্যা : ৫০০ কপি
মোট খরচ : ১৬,০০০ টাকা
যে ধরনের বই হতে পারে : ছোটদের গল্প/ছড়া।
৩.
সাইজ : ৭.২৫×৯.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ২ (১৬ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : চার কালার
বাঁধাই : স্ট্যাপলার
কভার পেপার : ৩০০/৩৫০ গ্রাম ওয়ান সাইড গ্লোসি বোর্ড
অলঙ্করণ : হবে
সংখ্যা : ৫০০ কপি
মোট খরচ : ৩১,৫০০ টাকা
যে ধরনের বই হতে পারে : ছোটদের গল্প/ছড়া।
৪.
সাইজ : ৭.২৫×৯.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ২ (১৬ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : স্ট্যাপলার
কভার পেপার : ৩০০/৩৫০ গ্রাম ওয়ান সাইড গ্লোসি বোর্ড
অলঙ্করণ : হবে
সংখ্যা : ৫০০ কপি
মোট খরচ : ২৩,০০০ টাকা
যে ধরনের বই হতে পারে : ছোটদের গল্প/ছড়া।
৫.
সাইজ : ৭.২৫×৯.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৩ (২৪ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : চার কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে
সংখ্যা : ৫০০ কপি
মোট খরচ : ৪৭,৫০০ টাকা
যে ধরনের বই হতে পারে : ছোটদের গল্প/ছড়া।
৬.
সাইজ : ৭.২৫×৯.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৪ (৩২ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : চার কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে
সংখ্যা : ৫০০ কপি
মোট খরচ : ৫৭,০০০ টাকা
যে ধরনের বই হতে পারে : ছোটদের গল্প/ছড়া।
৭.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৩ (৪৮ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ১৯,৫০০ টাকা। ৫০০ কপি ২৫,৫০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা।
৮.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৪ (৬৪ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ২২,৫০০ টাকা। ৫০০ কপি ২৮,৫০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
৯.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৫ (৮০ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ২৫,০০০ টাকা। ৫০০ কপি ৩১,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
১০.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৬ (৯৬ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ২৮,০০০ টাকা। ৫০০ কপি ৩৪,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
১১.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৭ (১১২ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ৩০,৫০০ টাকা। ৫০০ কপি ৩৭,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
১২.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ৮ (১২৮ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ৩৩,০০০ টাকা। ৫০০ কপি ৪০,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
১৩.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ১০ (১৬০ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ৩৬,০০০ টাকা। ৫০০ কপি ৪৩,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
১৪.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি (পেপারব্যাক)
ফর্মা সংখ্যা : ১০ (১৬০ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : পেপারব্যাক। তবে ফ্ল্যাপ থাকবে।
কভার পেপার : ৩০০/৩৫০ গ্রাম ওয়ান সাইড গ্লোসি বোর্ড/আর্ট কার্ড
অলঙ্করণ : কয়েকটি স্কেচ হবে
মোট খরচ : ৩০০ কপি ৩৬,০০০ টাকা। ৫০০ কপি ৪৩,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : প্রবন্ধ/উপন্যাস।
১৫.
সাইজ : ৫.৫×৮.৫ ইঞ্চি
ফর্মা সংখ্যা : ১৫ (১৬০ পৃষ্ঠা)
ভেতরের কাগজ : ৮০ গ্রাম দেশী
ভেতরের ছাপা : এক কালার
বাঁধাই : বোর্ড বাঁধাই
কভার পেপার : ১২০ গ্রাম আর্ট পেপার।
অলঙ্করণ : হবে না
মোট খরচ : ৩০০ কপি ৪৮,৫০০ টাকা। ৫০০ কপি ৫৬,০০০ টাকা।
যে ধরনের বই হতে পারে : কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/উপন্যাস।
মনের খোরাক আর জীবনযাপনের চাহিদা দুটোই মিটতে পারে প্রকাশনা ব্যবসায়। ‘প্রকাশনা ব্যবসা এখন কত বড় হয়েছে, তা বইমেলার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। আগে যেখানে মেলার প্রতি ১০০ দর্শনার্থীর মধ্যে পাঁচ-দশ জন বই কিনতেন, এখন সেখানে ২০-৩০ জন বই কিনছেন,’ বললেন প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্যের প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাইম। নাইমের বিশ্বাস, ‘আগামী ১০ বছরের মধ্যে প্রকাশনা ব্যবসা আরো ভালো পর্যায়ে চলে যাবে।’ বাস্তবিকই প্রকাশনা ব্যবসার ব্যাপ্তি আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। নবীনদের এ পেশার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিতে গিয়ে নাইম বলেন, ‘এই পেশার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, এতে সামাজিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নতি দুটো একসঙ্গেই হতে পারে। পেশাটিও এমন, যেখানে স্বকীয়তা ও সৃজনশীলতার ছাপ রাখা যায় সহজেই।’
যেভাবে শুরু করবেন : যে কোনো ব্যবসা শুরুর প্রথম ধাপে ট্রেড লাইসেন্স করতে হয়। ট্রেড লাইসেন্সের পরের ধাপগুলো সম্পর্কে অন্য প্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম জানান, ‘প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য নিজস্ব কম্পিউটার সেটআপ থাকা ভালো। যদিও কেউ ইচ্ছা করলে বাইরে থেকেও কাজ করিয়ে নিতে পারেন।’ তিনি আরো জানান, বড় বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নিজেদেরই প্র“ফ সেকশন থাকে। তবে এ কাজটিও বাইরে থেকে করিয়ে নেয়া সম্ভব। বই প্রকাশের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন মুদ্রণযন্ত্র। তবে ছাপাখানা যে নিজেরই থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। বাইরের কোনো ছাপাখানা থেকেও চুক্তির ভিত্তিতে ছাপার কাজটি করিয়ে নেয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে মাজহারুল ইসলাম জানান, বেশিরভাগ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব ছাপাখানা নেই। ঢাকার আরামবাগ, নীলক্ষেত, বাংলাবাজার প্রভৃতি এলাকায় অনেক ছাপাখানা আছে, যেখানে আরো অনেক কিছু ছাপানো হয়। বাঁধাইয়ের কাজটিও এ রকমভাবে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করিয়ে নেয়া যাবে। তবে প্রকাশনা ব্যবসার সব কিছুই নির্ভর করবে, আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করছেন তার ওপর। বেশি বিনিয়োগকারীর পুরো সেটআপই নিজস্ব হতে পারে। কম হলে প্রায় সব কাজই বাইরে থেকে করিয়ে নেয়া যাবে। তবে নিজস্ব কম্পিউটার ও প্র“ফ সেকশন না থাকলে মানসম্মত কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
কেমন পুঁজি প্রয়োজন : প্রকাশনা ব্যবসার বিনিয়োগ নানা আকারের হতে পারে। পুঁজি সম্পর্কে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আট-দশ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও স্বল্প পরিসরে প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে, তবে নিজস্ব সেটআপ করতে হলে ২০-২৫ লাখ টাকার প্রয়োজন।’ বিনিয়োগের খাতগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অফিস, ডেকোরেশন, কম্পিউটার সেকশন স্থাপনা সব মিলিয়ে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হতে পারে। আর আশি পৃষ্ঠার বিশটি বই ৫০০ পিস করে ছাপাতে সাত থেকে আট লাখ টাকার প্রয়োজন। তিনি জানান, একুশে বইমেলায় স্টল দিতে হলে প্রকাশনা সংস্থার ন্যূনতম ২০টি বই থাকতে হবে।
লাভের হিসাব-নিকাশ : ব্যবসায় না নেমে আগে থেকে লাভের হিসাব করা সম্ভব নয়। তবে যিনি যত বেশি মেধা প্রয়োগ করবেন, ব্যবসায়িক কৌশল অবলম্বন করতে পারবেন, তিনি তত বেশি সফল হবেন। সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে সৃজনশীল প্রকাশনার ক্ষেত্র এখনো পুরোপুরি পেশাদার হয়ে ওঠেনি। তবে যাঁরা প্রকাশনা ব্যবসায় যুক্ত আছেন, তারা এটাকে পেশা হিসেবে নিয়ে নানা কৌশল ব্যবহার করে লাভ বের করে নিচ্ছেন।’
টিকে থাকার কৌশল : প্রকাশনা ব্যবসায় নামতে চাইলে বড় পুঁজি নিয়ে নামাই ভালো। তবে প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে যারা বিভিন্ন ভাবে জড়িত, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলে কম বিনিয়োগেও এ ব্যবসায় নামা যায়, নিজের উদাহরণ টেনে এ কথা বলেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঠসূত্রের নির্বাহী পরিচালক রাজীব নূর। তিনি বলেন, ‘এ পেশায় টিকে থাকতে হলে বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হবে।’ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমি বইয়ে বিজ্ঞাপনের বদলে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ১০ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছি। এর মাধ্যমে আমি নিজের বিনিয়োগকে নিরাপদ জায়গায় আনতে পেরেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘নিজের প্রকাশনার লেখককে জনপ্রিয় করার পরিকল্পনাও প্রকাশকের মধ্যে থাকতে হবে। এজন্য মেধা, বুদ্ধি ও মননের ব্যবহার করতে হবে। শুধু টাকা বিনিয়োগ করলেই হবে না, ভালো মার্কেটিং নেটওয়ার্কও গড়ে তুলতে হবে।’
সফল হতে চাইলে : প্রকাশনা ব্যবসায় সফলতা অর্জনের জন্য একজন নবীন প্রকাশককে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, সেগুলো সম্পর্কে বলতে গিয়ে অবসরের কর্ণধার ফজলুর রহমান ও ঐতিহ্যের আরিফুর রহমান নাইম জানান।
* সঠিক ব্যবসা পরিকল্পনা ও বিপণন দক্ষতার প্রয়োজন।
* ভালো প্রকাশকের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সব ধরনের লেখকের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ভালো যোগাযোগ।
* বইয়ে যেন বানান ভুল না থাকে, যেন সুসম্পাদিত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। ভালো ছাপা, মানসম্মত বাঁধাই, প্রচ্ছদÑএসব দিকসহ প্রকাশনার মানের দিকে তীক্ষè নজর দিতে হবে। কারণ বাজার এখন দারুণ প্রতিযোগিতামূলক।
* সৃজনশীল এ পেশায় ভালো করতে হলে প্রকাশককেও সৃজনশীল হতে হবে। তার মধ্যে থাকতে হকে উদ্ভাবনী ক্ষমতা।
* ব্যবসায়িকভাবে সফলতা পেতে জনপ্রিয় লেখকদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন। তবে খ্যাতনামা লেখকদের লেখা পেতে চাইলে আগে ভালো বই বের করতে হবে, যাতে তিনি আস্থা রাখতে পারেন।
* লেখকদের সম্মানী সময়মতো পরিশোধ করতে হবে। প্রয়োজনে অগ্রিম দিতে হবে। এজন্য লেখকের সঙ্গে চুক্তি করে নেয়াটাই ভালো।
* ভালো মানের বই পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
* বিক্রি বাড়াতে প্রকাশক ঋতুভিত্তিক বই উৎসব, বইমেলার আয়োজন করে পাঠক তৈরি করতে পারেন। প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্টের আয়োজন করে, বই পুরস্কার দিয়েও পাঠক তৈরি করা সম্ভব।
অগাস্ট, ২০১৪।
Source: http://www.manobkantha.com
Follow Me